বিটা রশ্মি বা বিটা কণা আসলে ইলেকট্রন। এটি নিশ্চয়ই একটি বিস্ময়ের ব্যাপার যে নিউক্লিয়াসের ভেতরে থাকে শুধু প্রোটন এবং নিউট্রন কিন্তু সেখান থেকে ইলেকট্রন কেমন করে বের হয়ে আসে? সেটি ঘটার জন্য নিউক্লিয়াসের ভেতরের একটি নিউট্রনকে প্রোটনে পরিবর্তিত হতে হয়।
অর্থাৎ একটি চার্জহীন নিউট্রন পজিটিভ চার্জযুক্ত প্রোটন এবং নেগেটিভ চার্জযুক্ত ইলেকট্রনে পরিবর্তিত হয়, কাজেই মোট চার্জের পরিমাণ অপরিবর্তিত থাকে। সমীকরণের ডান পাশে দিয়ে পদার্থবিজ্ঞানের জগতের রহস্যময় কণা নিউট্রিনোর প্রতিপদার্থকে (এন্টি-নিউট্রিনো) বোঝানো হয়েছে, এটি চার্জহীন এবং এর ভর খুবই কম।
নিউক্লিয়াসের ভেতরে থেকে যখন আলফা কণা বের হয় সেটা একটি নির্দিষ্ট শক্তি নিয়ে বের হয় কিন্তু বিটা কণার জন্য সেটি সত্যি নয়। বিকিরণের মোট শক্তির কতটুকু নিউট্রিনো নিয়ে নেবে তার ওপর বিটা কণার শক্তি নির্ভর করে।
বিটা কণা যেহেতু ইলেকট্রন তাই তার চার্জ নেগেটিভ (ঋণাত্মক আধান) এবং সে কারণে সেটি ইলেকট্রিক এবং চৌম্বকীয় ক্ষেত্র দিয়ে প্রভাবিত করা যায়। এটি যখন কোনো পদার্থের ভেতর দিয়ে যায় তখন সেই পদার্থের অণু-পরমাণুর সাথে সংঘর্ষের কারণে সেগুলোকে আয়নিত করতে পারে। আলফা কণার হিলিয়াম নিউক্লিয়াসের তুলনায় ইলেকট্রন খুবই ক্ষুদ্র তাই ইলেকট্রনের ভেদনক্ষমতা অনেক বেশি এবং সেটি পদার্থের অনেক ভেতর ঢুকে যেতে পারে। কয়েক মিলিমিটার পুরু অ্যালুমিনিয়ামের পাত দিয়ে একটি সাধারণ বিটা কণাকে থামানো সম্ভব।
বিটা কণার বিকিরণ হলে নিউক্লিয়াসে একটি নিউট্রন কমে গিয়ে একটি প্রোটন বেড়ে যায়, তাই তার নিউক্লিওন সংখ্যা সমান থাকে। কিন্তু যেহেতু পারমাণবিক সংখ্যা প্রোটনের সংখ্যার ওপর নির্ভর করে তাই নিউক্লিয়াসের পারমাণবিক সংখ্যা বেড়ে ভিন্ন মৌলের নিউক্লিয়াসে পরিণত হয়। যেমন তেজস্ক্রিয় বিটা বিকিরণে এ পরিবর্তিত হয়:
(এন্টি-নিউট্রিনো)
মজার ব্যাপার হচ্ছে, বিটা বিকিরণ বলতে আমরা যে শুধু নিউক্লিয়াসের ভেতর থেকে ইলেকট্রনের বিকিরণ বোঝাই তা নয়, ইলেকট্রনের প্রতিপদার্থ পজিট্রনের বিকিরণকেও বিটা বিকিরণ বলে। তার জন্য নিউক্লিয়াসের ভেতরে কোনো একটি প্রোটনকে নিউট্রনে পরিবর্তিত হতে হয়:
(নিউট্রিনো)
এই প্রক্রিয়াতে নিউক্লিয়াসে প্রোটনের সংখ্যা এক কমে যায় বলে তার পারমাণবিক সংখ্যাও এক কমে ভিন্ন মৌলের নিউক্লিয়াসে পরিণত হয়। (এ বিক্রিয়াটি নিউক্লিয়াসের বাইরে হতে পারে না। কারণ নিউট্রনের ভর প্রোটনের চেয়ে বেশি।)
বিটা বিকিরণের সময় নিউট্রিনো কিংবা অ্যান্টি নিউট্রিনো বের হলেও আমরা সেগুলোকে তেজস্ক্রিয় রশ্মি হিসেবে বিবেচনা করিনি, কারণ এগুলো চার্জবিহীন এবং পদার্থের সাথে এদের বিক্রিয়া এত কম যে কয়েক আলোকবর্ষ দীর্ঘ সিসার পাত দিয়েও একটা নিউট্রিনোকে থামানো যায় না!
আরও দেখুন...